উনচল্লিশ
সেদিন রাত থেকে দেখি মা আর আমার সাথে কোন কথা বলছেনা।একবারে গুম মেরে সারাক্ষন কি যেন একটা চিন্তা করে চলেছে। বুঝি আমাকে এখান থেকে সরিয়ে দেবার ব্যাপারে মন স্থির করার চেষ্টা চালাচ্ছে মা।যতই হোক নিজের পেটের ছেলেতো, মন মানছেনা আমাকে এখান থেকে সরিয়ে দিতে। আথচ মনে বিয়ে করার ইচ্ছেও এখন প্রবল। ঠিক বুঝতে পারছেনা কি করবে? এদিকে ছেলের চোখের সামনে নির্লজ্জ্যের মত বিয়ে করতেও লজ্জ্যাও হচ্ছে। বুঝতে পারছে ছেলে সামনে থাকলে বিয়ের মজা অনেকটাই তেঁতো হয়ে যাবে। ভাবছে কি ভাবে গুছিয়ে আমাকে বলবে ছোটকাকে বিয়ে করার কথা বা এখান থেকে আমাকে সরিয়ে দেবার কথা।
আমি তো জানতাম কি হতে যাচ্ছে, কিন্তু তবু শুধু মার মুখ থেকে শুনবো বলেই জিগ্যেস করলাম -তুমি আমার সাথে কথা বলছোনা কেন মা? মা খেঁকিয়ে উঠলো -একটা টেনে থাপ্পর মারবো তোমার গালে।কি করতে তুমি ছাতে গিয়েছিলে আজ? তোমাকে সবাই বারন করার পরেও কেন গিয়েছিলে বল? আমি মিনমিন করে বললাম -এমনি।
-এমনি না নিজের মাকে ন্যাংটা দেখার সাধ হয়েছিল বলে?
আমি জানতাম মা আমাকে বকাবকি করবে, কিন্তু এরকম করে খেঁকিয়ে খেঁকিয়ে নোংরা কথা বলে বলে বকবে সেটা আমি ভাবতেই পারিনি। মা থামলো না বলেই চললো।
-কি হল বল? নিজের মাকে ন্যাংটা দেখার সখ কি তোমার? তাহলে বল, সব খুলে দিচ্ছি প্রানভরে দেখ।
আমি চুপ করে রইলাম। আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে লাগলো। মা বললো -পড়াশুনায় মন নেই, পেকে একবারে ঝুনো হয়ে গেছ তুমি।আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে ফোঁপাতে থাকলাম। বাবা নেই, কাছের লোক বলতে শুধু আমার মা আর ঠাকুমা। ওরাই যদি আমাকে এখান থেকে সরিয়ে দিতে চায় তাহলে আর কার কাছে গিয়ে দুঃখ করবো আমি।নিজের মা ঠাকুমার সাথে লড়ে কি আর পারা যায়। ওরা এখন যা চাইছে তাই আমাকে মুখ বুঁজে মেনে নিতে হবে।
চল্লিশ
মা বিছানা ঝাড়তে শুরু করলো। তারপর মশারী টাঙ্গিয়ে আমাকে বললো -আর কেঁদে কেঁদে ন্যাকামো করতে হবেনা, নাও এখন শুয়ে পর।আমি শুয়ে পড়ার পর মা লাইট নিবিয়ে দিল। আমি অন্ধকারে মুখ বুজে কান্না চেপে শুয়ে আছি, মার চোখেও ঘুম নেই।এদিকে মার শরীরের গন্ধ আর ছোঁয়া না পেয়ে আমারো আর ঘুম আসছেনা। কিছুক্ষণ পর নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে মা একটু নরম গলায় বলে উঠলো -তোমার ঠাকুমা ঠিক করেছে এখন থেকে তুমি তোমার পিসির বাড়িতে থেকে পড়াশুনা করবে।একদম গুইগাঁই করবেনা, ঠাকুমা যেদিন যেতে বলবে সেদিনই চলে যাবে।আমি বুঝলাম মা আমার যাবার বাপারে মনস্থির করে ফেলেছে। অর্থাৎ ছেলের প্রতি মায়ের স্বাভাবিক দুর্বলতা নয় মার এই মানসিক দ্বন্দে শেষ পর্যন্ত নিশ্চিন্তে আবার বিয়ে করার ইচ্ছেটাই জিতে গেল।
মাকে একটু কান্না ভেজা গলায় বললাম -মা তুমি যে আমাকে সেদিন বলেছিলে তুমি আর বিয়ে করবেনা?
মা আবার আগের মত ঝাঁঝিয়ে ওঠে -আমি আবার কবে তোমাকে বললাম বিয়ে করবো না? আমি শুধু বলেছিলাম তোমার মা তোমারই থাকবে, আর তোমাকে ছেড়ে কখনো কোথাও যাবেনা।আর সেটা আমি ঠিকই বলেছি।তুমি এখন থেকে পিসির বাড়ি গিয়ে থাকলে তোমারই পরীক্ষার রেসাল্ট ভাল হবে। পরীক্ষার পর তুমিতো আবার এখানে ফিরে আসবে।আমরা কি বলছি চিরকাল তোমাকে পিসির বাড়ি গিয়ে থাকতে? আমরা যা করছি তা তোমার ভালোর জন্যই তো করছি। আমি বা তোমার ঠাকুমা... আমরা কি তোমার পর যে তোমার ক্ষতি করবো? তারপর গলার স্বর নামিয়ে একটু সাগোগতির ঢঙে বলে -আর তোমাকে ছেড়ে আমিও বেশিদিন থাকতে পারবোনা।মায়ের গলাটা আবার যেন একটু নরম শোনাল।
ভাবলাম মায়ের কাছে যদি এই সুযোগে যদি একটু সহানুভুতি আদায় করা যায়। বললাম -যখন ফিরে আসবো তখন কি আর তুমি এইভাবে রাতে আমাকে তোমার পাশে শুতে দেবে? মা আবার খেঁকিয়ে উঠলো। -দেখ টুকুন আমার মাথা গরম করিসনা। তুই খুব ভাল করেই জানিস তোর ছোটকা কে আমি বিয়ে করতে যাচ্ছি। তারপর এই কথা জিগ্যেস করার মানে কি? তোর বয়স তো কম নয়? সামনের বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিস তুই। তোর যথেষ্ট বোঝার বয়স হয়েছে মানুষ কেন বিয়ে করে আর বিয়ের পর রাতে আমার আর তোর ছোটকার মধ্যে কি হবে। আমি চুপ করে রইলাম। উফ মা বিয়ের বাপারে কোন বাধাই আর মানতে চাইছে না। মা আবার গজরে উঠলো –নাকি আজকের মত আবার চুপি চুপি আড়ি পেতে দেখতে চাস বিয়ের পর আমি আর ছোটকা রাতে কি কি করি।আমি এবার প্রায় কাঁদতে কাঁদতে বললাম -না না তা নয়। মা আবার ধমক দিয়ে উঠে বলে -তাহলে এসব বোকা বোকা কথা জিগ্যেস করছিস কেন তুই? বুঝলাম মা নিজের বিয়ে নিয়ে লজ্জ্যা চাপা দেবার জন্য আমাকে ধমকাচ্ছে। লোকে বলে না অফেন্স ইজ দ্যা বেস্ট ডিফেন্স। যেটা অত সহজে মা আমাকে ধমকে ধমকে বলে দিল সেটা আমার কাছে নরম ভাবে, আমাকে আদর করে বুঝিয়ে বলা মার কাছে যেমন মুস্কিলের ছিল তেমন লজ্জ্যারও ছিল। ভীষণ সেন্সসিটিভ ব্যাপার এটা।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে ঘুমিয়ে পরার চেষ্টা করতে লাগলাম।মায়ের সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি করে আমার আর এবাড়িতে থেকে যাওয়ার ইচ্ছে ছিলনা। পরের দিন থেকে মায়ের সাথে আর একটাও কথা বলিনি আমি। ঠাকুমা দুদিন পরই আমাকে ডেকে বললো –আমি ঠিক করেছি এখন থেকে তুই তোর পিসির বাড়িতে থেকে পড়াশুনা করবি। ঠাকুমা কে আশ্চর্য করে আমি ঠাকুমার সব কথা একবাক্যে ঘাড় নেড়ে মেনে নিলাম। ঠাকুমা আমার চুপচাপ মাথা নাড়া দেখে বলে -তোর মার সাথে কি তোর এনিয়ে কোন কথা হয়েছে? আমি মাথা নাড়ি। ঠাকুমা বলে তাহলে তুই কবে যেতে চাস? তোর মাসির সঙ্গে আমার সব কথা হয়ে গেছে। সামনের মাসেই চলে যা। ঠাকুমাকে আবারো অবাক করে আমি বলি -না আমি সামনের সপ্তাহেই চলে যাচ্ছি।
বঙ্কুর সাথে দেখা করতে গেলাম একদিন।আমি চলে যাচ্ছি শুনে বঙ্কু বলে -আমার মাটাই আসলে শয়তানি করলো। ওর জন্যই এরকম হল। আমি বলি মোক্ষদামাসির কোন দোষ নেই। জব মিয়াঁ বিবি রাজি তো কেয়া করেগা কাজি। সবই আমার ভাগ্য। বাবাকে আগে হারিয়ে ছিলাম এখন থেকে মাকেও হারালাম। যাক একদিক থেকে ভালই হল। আজ থেকে জেনে গেলাম আমার আর কেউ নেই। না মা না ঠাকুমা কেউ আমাকে এখানে চায়না।
একচল্লিশ
বঙ্কু বলে বুঝতে পারছি তোর খুব কষ্ট হচ্ছে। তবে একটা কথা তোকে বলি যদি তুই আমার ওপর রেগে না যাস। আমি বলি রেগে যাব কেন? তুই তো আমার ল্যাঙটো বেলাকার বন্ধু। বঙ্কু বলে -দেখ কত লোকে তো কত খারাপ কাজ করছে, চুরি করছে ডাকাতি করছে খুন করছে, তোর মা কিন্তু কোন খারাপ কাজ করে নি। আবার বিয়ে করাটা কিন্তু আর যাই হোক খুব খারাপ কোন কাজ নয়। জানি তোর এখান থেকে চলে যেতে খারাপ লাগছে কিন্তু সত্যি বলতে কি এখন এখানে থাকলে তোর ভাল হোত না। বিয়ের পর তোর মা আর তোর ছোটকার স্বাভাবিক আদর আল্লাদে তুই শুধু শুধু বিনা কারনে মানসিক কষ্ট পেতিস।তোর ঠাকুমা কিন্তু একবারে ঠিক ডিসিশনই নিয়েছে।
তোকে আর একটা কথা বলি ভাই মন দিয়ে শোন। তুই যার শরীরের অংশ, যার পেটে দশমাস ছিলি, যার বুকের দুধ খেয়ে বড় হয়েছিস তার ওপর অভিমান করে শুধু শুধু কষ্ট পেতে যাসনা। মায়ের সব ইচ্ছে মেনে মায়ের কাছে নিজেকে সেঁপে দে। নিজের মার সাথে কখনো লড়িস না। ও লড়াইতে তুই কিছুতেই জিততে পারবিনা। জিতলেও হেরে যাবি। ভাব তোর মন চেয়ে তোর মা যদি এতদুর এগিয়েও তোর ছোটকাকে বিয়ে না করে তাহলে তোর ছোটকা কি কোনদিন তোকে মাফ করবে। বা ছোটকা কে ছাড় তোর মা তো মনে মনে ভাববে যে আমার পেটের ছেলেই আমাকে সুখি হতে দিলনা। বিনা কারনে তোর মাকে দিয়ে কেন সাক্রিফাইজ করাবি তুই? তার থেকে এই লড়াই তে তুই ইচ্ছে করে হেরে যা। শেষে দেখবি তুইই জিতবি।
এই দেখ আমার মা তো কত কি করে, বাবা নেই বলে কত লোককে ঘরে এনে তোলে।আমি কিন্তু সব মেনে নিই। কারন আমি বিশ্বাস করি মার সাথে লড়াইতে কোনদিন কেউ জিততে পারেনা।মা যা করছে করুক, কিন্তু কোনদিন যেন না ভাবে নিজের পেটের ছেলেই আমার সখ আল্লাদ মেটাতে দিচ্ছে না।আমার মার চরিত্র খারাপ হতে পারে কিন্তু যাদের মা নেই তাদের থেকে অনেক ভাল আছি আমি। মা না থাকার জ্বালা যে কি সে যার মা নেই সেই একমাত্র বুঝতে পারে।
আমি বলি -তুই হয়তো ঠিকই বলছিস বঙ্কু। আমিও ওই জন্য ঠিক করেছি ওরা যেমন চাইছে সেরকম ওদের কথা মেনে নিয়ে চুপচাপ এখান থেকে চলে যাব, ওদের সাথে কোনভাবে লড়ার চেষ্টা করবোনা। তবে আমার মনের এখন যা অবস্থা তাতে মায়ের ওপর অভিমান না করে থাকতে পারবোনা।
বেয়াল্লিশ
সেদিন রাতে শোবার সময় মা আমার সাথে একটু কথা বলার চেষ্টা করলো। বোঝানোর চেষ্টা করলো, বলে -আমি তোর ছোটকা কে বিয়ে করছি ঠিকই, কিন্তু তোকে আমি সেই আগের মতই ভালবাসবো।তুই আমার ছেলে, আমার কাছে তোর দাম কি কোনদিন কমতে পারে? দেখ তোর বয়স হচ্ছে, তোকে তো বুঝতে হবে বিয়ের পর তোর মা আর তোর ছোটকার একটু প্রাইভেসি দরকার হবে। কিছু গোপন ব্যাপার স্যাপ্যারও নিশ্চই থাকবে দুজনের মধ্যেকার দাম্পত্ত্য জীবনে। হয়তো তোর আর একটা ভাইবোন ও হবে। কিন্তু এসবের জন্য তুই যদি ভাবিস তোর মা তোর থেকে দুরে সরে যাচ্ছে তাহলে কিন্তু খুব ভুল করবি।
হয়তো বিয়ের পরে তোর ছোটকার সঙ্গে আমার সম্পর্ক ঠিক আগের মত থাকবেনা। বিয়ের পর স্বামী স্ত্রী হিসেবে পিকু আর আমি অনেক কাছাকাছি আসবো কিন্তু তার ফলে তোর সঙ্গে আমার মা ছেলের সম্পর্কে কেন প্রভাব পরবে? আমার আবার একটা বিয়ে হয়েছে বলে বা আমার আবার একটা সংসার হয়েছে বলে আমি তোকে কোন দিন একফোঁটাও কম ভালবাসবোনা।কোন মা তার বড় ছেলেকে কোনদিন ভালনাবেসে থাকতে পারেনা। আর তোর ছোটকা তো বাইরের কেউ নয়, সেতো আমাদের পরিবারেরই ছেলে।আমাদের বিয়েতে দেখবি আমাদের পরিবারের বাঁধনই আরো দৃঢ় হবে। আমি কোন কথা বলিনা, চুপ করে থাকি। শুধু মনে মনে বঙ্কুর কথাটা আওরাই। মার সাথে লড়ে কেউ জিততে পারেনা...কেউ না।
আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে মা বলে -জানি তোর খারাপ লাগছে, তুই ভাবছিস মা আবার সংসার করার জন্য আমায় দুরে সরিয়ে দিচ্ছে। হয়তো ভাবছিস তোর মা সেক্স করার জন্য পাগল। দেখ তোর মা হলেও আমি তো একটা মানুষ, আমি তো কোন দেবী নই। আমারো তো শরীরে খিদে তেষ্টা আছে। আমারো তো একটু ভালভাবে বাঁচার ইচ্ছে হয়। আমি তো কোন খারাপ কাজ করিনি, কাউকে ঠকাইনি। তোর বাবা যতদিন বেঁচে ছিল ততদিন তোর বাবাকে তো আমি সুখেই রেখেছিলাম। তোর বাবা অমন করে চলে যাবার পর যদি কাউকে আবার ভালবেসে ঘরবাধি তাহলে কি খুব আপরাধ করেছি আমি?আমি একটা কথাও মার কথার উত্তরে বলিনি।শুধু মাথা নেড়েছি।
সেদিন রাত থেকে দেখি মা আর আমার সাথে কোন কথা বলছেনা।একবারে গুম মেরে সারাক্ষন কি যেন একটা চিন্তা করে চলেছে। বুঝি আমাকে এখান থেকে সরিয়ে দেবার ব্যাপারে মন স্থির করার চেষ্টা চালাচ্ছে মা।যতই হোক নিজের পেটের ছেলেতো, মন মানছেনা আমাকে এখান থেকে সরিয়ে দিতে। আথচ মনে বিয়ে করার ইচ্ছেও এখন প্রবল। ঠিক বুঝতে পারছেনা কি করবে? এদিকে ছেলের চোখের সামনে নির্লজ্জ্যের মত বিয়ে করতেও লজ্জ্যাও হচ্ছে। বুঝতে পারছে ছেলে সামনে থাকলে বিয়ের মজা অনেকটাই তেঁতো হয়ে যাবে। ভাবছে কি ভাবে গুছিয়ে আমাকে বলবে ছোটকাকে বিয়ে করার কথা বা এখান থেকে আমাকে সরিয়ে দেবার কথা।
আমি তো জানতাম কি হতে যাচ্ছে, কিন্তু তবু শুধু মার মুখ থেকে শুনবো বলেই জিগ্যেস করলাম -তুমি আমার সাথে কথা বলছোনা কেন মা? মা খেঁকিয়ে উঠলো -একটা টেনে থাপ্পর মারবো তোমার গালে।কি করতে তুমি ছাতে গিয়েছিলে আজ? তোমাকে সবাই বারন করার পরেও কেন গিয়েছিলে বল? আমি মিনমিন করে বললাম -এমনি।
-এমনি না নিজের মাকে ন্যাংটা দেখার সাধ হয়েছিল বলে?
আমি জানতাম মা আমাকে বকাবকি করবে, কিন্তু এরকম করে খেঁকিয়ে খেঁকিয়ে নোংরা কথা বলে বলে বকবে সেটা আমি ভাবতেই পারিনি। মা থামলো না বলেই চললো।
-কি হল বল? নিজের মাকে ন্যাংটা দেখার সখ কি তোমার? তাহলে বল, সব খুলে দিচ্ছি প্রানভরে দেখ।
আমি চুপ করে রইলাম। আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে লাগলো। মা বললো -পড়াশুনায় মন নেই, পেকে একবারে ঝুনো হয়ে গেছ তুমি।আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে ফোঁপাতে থাকলাম। বাবা নেই, কাছের লোক বলতে শুধু আমার মা আর ঠাকুমা। ওরাই যদি আমাকে এখান থেকে সরিয়ে দিতে চায় তাহলে আর কার কাছে গিয়ে দুঃখ করবো আমি।নিজের মা ঠাকুমার সাথে লড়ে কি আর পারা যায়। ওরা এখন যা চাইছে তাই আমাকে মুখ বুঁজে মেনে নিতে হবে।
চল্লিশ
মা বিছানা ঝাড়তে শুরু করলো। তারপর মশারী টাঙ্গিয়ে আমাকে বললো -আর কেঁদে কেঁদে ন্যাকামো করতে হবেনা, নাও এখন শুয়ে পর।আমি শুয়ে পড়ার পর মা লাইট নিবিয়ে দিল। আমি অন্ধকারে মুখ বুজে কান্না চেপে শুয়ে আছি, মার চোখেও ঘুম নেই।এদিকে মার শরীরের গন্ধ আর ছোঁয়া না পেয়ে আমারো আর ঘুম আসছেনা। কিছুক্ষণ পর নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে মা একটু নরম গলায় বলে উঠলো -তোমার ঠাকুমা ঠিক করেছে এখন থেকে তুমি তোমার পিসির বাড়িতে থেকে পড়াশুনা করবে।একদম গুইগাঁই করবেনা, ঠাকুমা যেদিন যেতে বলবে সেদিনই চলে যাবে।আমি বুঝলাম মা আমার যাবার বাপারে মনস্থির করে ফেলেছে। অর্থাৎ ছেলের প্রতি মায়ের স্বাভাবিক দুর্বলতা নয় মার এই মানসিক দ্বন্দে শেষ পর্যন্ত নিশ্চিন্তে আবার বিয়ে করার ইচ্ছেটাই জিতে গেল।
মাকে একটু কান্না ভেজা গলায় বললাম -মা তুমি যে আমাকে সেদিন বলেছিলে তুমি আর বিয়ে করবেনা?
মা আবার আগের মত ঝাঁঝিয়ে ওঠে -আমি আবার কবে তোমাকে বললাম বিয়ে করবো না? আমি শুধু বলেছিলাম তোমার মা তোমারই থাকবে, আর তোমাকে ছেড়ে কখনো কোথাও যাবেনা।আর সেটা আমি ঠিকই বলেছি।তুমি এখন থেকে পিসির বাড়ি গিয়ে থাকলে তোমারই পরীক্ষার রেসাল্ট ভাল হবে। পরীক্ষার পর তুমিতো আবার এখানে ফিরে আসবে।আমরা কি বলছি চিরকাল তোমাকে পিসির বাড়ি গিয়ে থাকতে? আমরা যা করছি তা তোমার ভালোর জন্যই তো করছি। আমি বা তোমার ঠাকুমা... আমরা কি তোমার পর যে তোমার ক্ষতি করবো? তারপর গলার স্বর নামিয়ে একটু সাগোগতির ঢঙে বলে -আর তোমাকে ছেড়ে আমিও বেশিদিন থাকতে পারবোনা।মায়ের গলাটা আবার যেন একটু নরম শোনাল।
ভাবলাম মায়ের কাছে যদি এই সুযোগে যদি একটু সহানুভুতি আদায় করা যায়। বললাম -যখন ফিরে আসবো তখন কি আর তুমি এইভাবে রাতে আমাকে তোমার পাশে শুতে দেবে? মা আবার খেঁকিয়ে উঠলো। -দেখ টুকুন আমার মাথা গরম করিসনা। তুই খুব ভাল করেই জানিস তোর ছোটকা কে আমি বিয়ে করতে যাচ্ছি। তারপর এই কথা জিগ্যেস করার মানে কি? তোর বয়স তো কম নয়? সামনের বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিস তুই। তোর যথেষ্ট বোঝার বয়স হয়েছে মানুষ কেন বিয়ে করে আর বিয়ের পর রাতে আমার আর তোর ছোটকার মধ্যে কি হবে। আমি চুপ করে রইলাম। উফ মা বিয়ের বাপারে কোন বাধাই আর মানতে চাইছে না। মা আবার গজরে উঠলো –নাকি আজকের মত আবার চুপি চুপি আড়ি পেতে দেখতে চাস বিয়ের পর আমি আর ছোটকা রাতে কি কি করি।আমি এবার প্রায় কাঁদতে কাঁদতে বললাম -না না তা নয়। মা আবার ধমক দিয়ে উঠে বলে -তাহলে এসব বোকা বোকা কথা জিগ্যেস করছিস কেন তুই? বুঝলাম মা নিজের বিয়ে নিয়ে লজ্জ্যা চাপা দেবার জন্য আমাকে ধমকাচ্ছে। লোকে বলে না অফেন্স ইজ দ্যা বেস্ট ডিফেন্স। যেটা অত সহজে মা আমাকে ধমকে ধমকে বলে দিল সেটা আমার কাছে নরম ভাবে, আমাকে আদর করে বুঝিয়ে বলা মার কাছে যেমন মুস্কিলের ছিল তেমন লজ্জ্যারও ছিল। ভীষণ সেন্সসিটিভ ব্যাপার এটা।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে ঘুমিয়ে পরার চেষ্টা করতে লাগলাম।মায়ের সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি করে আমার আর এবাড়িতে থেকে যাওয়ার ইচ্ছে ছিলনা। পরের দিন থেকে মায়ের সাথে আর একটাও কথা বলিনি আমি। ঠাকুমা দুদিন পরই আমাকে ডেকে বললো –আমি ঠিক করেছি এখন থেকে তুই তোর পিসির বাড়িতে থেকে পড়াশুনা করবি। ঠাকুমা কে আশ্চর্য করে আমি ঠাকুমার সব কথা একবাক্যে ঘাড় নেড়ে মেনে নিলাম। ঠাকুমা আমার চুপচাপ মাথা নাড়া দেখে বলে -তোর মার সাথে কি তোর এনিয়ে কোন কথা হয়েছে? আমি মাথা নাড়ি। ঠাকুমা বলে তাহলে তুই কবে যেতে চাস? তোর মাসির সঙ্গে আমার সব কথা হয়ে গেছে। সামনের মাসেই চলে যা। ঠাকুমাকে আবারো অবাক করে আমি বলি -না আমি সামনের সপ্তাহেই চলে যাচ্ছি।
বঙ্কুর সাথে দেখা করতে গেলাম একদিন।আমি চলে যাচ্ছি শুনে বঙ্কু বলে -আমার মাটাই আসলে শয়তানি করলো। ওর জন্যই এরকম হল। আমি বলি মোক্ষদামাসির কোন দোষ নেই। জব মিয়াঁ বিবি রাজি তো কেয়া করেগা কাজি। সবই আমার ভাগ্য। বাবাকে আগে হারিয়ে ছিলাম এখন থেকে মাকেও হারালাম। যাক একদিক থেকে ভালই হল। আজ থেকে জেনে গেলাম আমার আর কেউ নেই। না মা না ঠাকুমা কেউ আমাকে এখানে চায়না।
একচল্লিশ
বঙ্কু বলে বুঝতে পারছি তোর খুব কষ্ট হচ্ছে। তবে একটা কথা তোকে বলি যদি তুই আমার ওপর রেগে না যাস। আমি বলি রেগে যাব কেন? তুই তো আমার ল্যাঙটো বেলাকার বন্ধু। বঙ্কু বলে -দেখ কত লোকে তো কত খারাপ কাজ করছে, চুরি করছে ডাকাতি করছে খুন করছে, তোর মা কিন্তু কোন খারাপ কাজ করে নি। আবার বিয়ে করাটা কিন্তু আর যাই হোক খুব খারাপ কোন কাজ নয়। জানি তোর এখান থেকে চলে যেতে খারাপ লাগছে কিন্তু সত্যি বলতে কি এখন এখানে থাকলে তোর ভাল হোত না। বিয়ের পর তোর মা আর তোর ছোটকার স্বাভাবিক আদর আল্লাদে তুই শুধু শুধু বিনা কারনে মানসিক কষ্ট পেতিস।তোর ঠাকুমা কিন্তু একবারে ঠিক ডিসিশনই নিয়েছে।
তোকে আর একটা কথা বলি ভাই মন দিয়ে শোন। তুই যার শরীরের অংশ, যার পেটে দশমাস ছিলি, যার বুকের দুধ খেয়ে বড় হয়েছিস তার ওপর অভিমান করে শুধু শুধু কষ্ট পেতে যাসনা। মায়ের সব ইচ্ছে মেনে মায়ের কাছে নিজেকে সেঁপে দে। নিজের মার সাথে কখনো লড়িস না। ও লড়াইতে তুই কিছুতেই জিততে পারবিনা। জিতলেও হেরে যাবি। ভাব তোর মন চেয়ে তোর মা যদি এতদুর এগিয়েও তোর ছোটকাকে বিয়ে না করে তাহলে তোর ছোটকা কি কোনদিন তোকে মাফ করবে। বা ছোটকা কে ছাড় তোর মা তো মনে মনে ভাববে যে আমার পেটের ছেলেই আমাকে সুখি হতে দিলনা। বিনা কারনে তোর মাকে দিয়ে কেন সাক্রিফাইজ করাবি তুই? তার থেকে এই লড়াই তে তুই ইচ্ছে করে হেরে যা। শেষে দেখবি তুইই জিতবি।
এই দেখ আমার মা তো কত কি করে, বাবা নেই বলে কত লোককে ঘরে এনে তোলে।আমি কিন্তু সব মেনে নিই। কারন আমি বিশ্বাস করি মার সাথে লড়াইতে কোনদিন কেউ জিততে পারেনা।মা যা করছে করুক, কিন্তু কোনদিন যেন না ভাবে নিজের পেটের ছেলেই আমার সখ আল্লাদ মেটাতে দিচ্ছে না।আমার মার চরিত্র খারাপ হতে পারে কিন্তু যাদের মা নেই তাদের থেকে অনেক ভাল আছি আমি। মা না থাকার জ্বালা যে কি সে যার মা নেই সেই একমাত্র বুঝতে পারে।
আমি বলি -তুই হয়তো ঠিকই বলছিস বঙ্কু। আমিও ওই জন্য ঠিক করেছি ওরা যেমন চাইছে সেরকম ওদের কথা মেনে নিয়ে চুপচাপ এখান থেকে চলে যাব, ওদের সাথে কোনভাবে লড়ার চেষ্টা করবোনা। তবে আমার মনের এখন যা অবস্থা তাতে মায়ের ওপর অভিমান না করে থাকতে পারবোনা।
বেয়াল্লিশ
সেদিন রাতে শোবার সময় মা আমার সাথে একটু কথা বলার চেষ্টা করলো। বোঝানোর চেষ্টা করলো, বলে -আমি তোর ছোটকা কে বিয়ে করছি ঠিকই, কিন্তু তোকে আমি সেই আগের মতই ভালবাসবো।তুই আমার ছেলে, আমার কাছে তোর দাম কি কোনদিন কমতে পারে? দেখ তোর বয়স হচ্ছে, তোকে তো বুঝতে হবে বিয়ের পর তোর মা আর তোর ছোটকার একটু প্রাইভেসি দরকার হবে। কিছু গোপন ব্যাপার স্যাপ্যারও নিশ্চই থাকবে দুজনের মধ্যেকার দাম্পত্ত্য জীবনে। হয়তো তোর আর একটা ভাইবোন ও হবে। কিন্তু এসবের জন্য তুই যদি ভাবিস তোর মা তোর থেকে দুরে সরে যাচ্ছে তাহলে কিন্তু খুব ভুল করবি।
হয়তো বিয়ের পরে তোর ছোটকার সঙ্গে আমার সম্পর্ক ঠিক আগের মত থাকবেনা। বিয়ের পর স্বামী স্ত্রী হিসেবে পিকু আর আমি অনেক কাছাকাছি আসবো কিন্তু তার ফলে তোর সঙ্গে আমার মা ছেলের সম্পর্কে কেন প্রভাব পরবে? আমার আবার একটা বিয়ে হয়েছে বলে বা আমার আবার একটা সংসার হয়েছে বলে আমি তোকে কোন দিন একফোঁটাও কম ভালবাসবোনা।কোন মা তার বড় ছেলেকে কোনদিন ভালনাবেসে থাকতে পারেনা। আর তোর ছোটকা তো বাইরের কেউ নয়, সেতো আমাদের পরিবারেরই ছেলে।আমাদের বিয়েতে দেখবি আমাদের পরিবারের বাঁধনই আরো দৃঢ় হবে। আমি কোন কথা বলিনা, চুপ করে থাকি। শুধু মনে মনে বঙ্কুর কথাটা আওরাই। মার সাথে লড়ে কেউ জিততে পারেনা...কেউ না।
আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে মা বলে -জানি তোর খারাপ লাগছে, তুই ভাবছিস মা আবার সংসার করার জন্য আমায় দুরে সরিয়ে দিচ্ছে। হয়তো ভাবছিস তোর মা সেক্স করার জন্য পাগল। দেখ তোর মা হলেও আমি তো একটা মানুষ, আমি তো কোন দেবী নই। আমারো তো শরীরে খিদে তেষ্টা আছে। আমারো তো একটু ভালভাবে বাঁচার ইচ্ছে হয়। আমি তো কোন খারাপ কাজ করিনি, কাউকে ঠকাইনি। তোর বাবা যতদিন বেঁচে ছিল ততদিন তোর বাবাকে তো আমি সুখেই রেখেছিলাম। তোর বাবা অমন করে চলে যাবার পর যদি কাউকে আবার ভালবেসে ঘরবাধি তাহলে কি খুব আপরাধ করেছি আমি?আমি একটা কথাও মার কথার উত্তরে বলিনি।শুধু মাথা নেড়েছি।